লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরের হাটবাজারে অতিরিক্ত টোল আদায়ের নামে নৈরাজ্য স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। সরকার নির্ধারিত টোল আদায়ের দার দারে না ইজারাদাররা। স্ব-নির্ধারিত মূল্যে ইজারাদার হাটবাজারে টোল আদায় করছে।এ বিষয়ে হাজির হাট মাছ বাজারের টোল আদায়কারী ও ইজারা সিন্ডিকেটের সদস্য মোহাম্মদ শফিক নিজেই দম্ভ করে বলেছেন, আমি মাছের প্রতি দোকান থেকে ৬০ টাকার স্থলে ৪০০ টাকা আদায় করি! তিনি আরো বলেন, আমরা সকল খাত ম্যানেজ করেই বাজার ইজারা নেই।.
.
প্রতি বাজারের টোল চার্ট প্রদর্শন করার কথা থাকলেও উপজেলার কোন বাজারেই টোল চার্ট দেখা যায়নি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রান্তিক কৃষক ও সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, ইজারাদাররা রশিদের মাধ্যমে টোল আদায়ের কথা থাকলেও ইজারাদারের চেলা-চামুণ্ডারা রশিদ ছাড়াই প্রতিবছর সরকার নির্ধারিত মূল্যের চাইতে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি টোল আদায় করছে। এ বিষয়ে মুখ খুললেই শারীরিক মানসিক হেনস্তার শিকার হওয়া নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। তারা আরো বলেন, ইজারাদারদের টোল আদায়কারীদের সাফ জবাব না পোষালে বাজারে আসবেন না। অতিরিক্ত টোল এবং হেনস্থার ভয়ে অনেক গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পণ্য নিয়ে বাজারে না এসে গ্রামের ফেরি করে বিক্রয় করেন।তারা এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারি প্রশাসনের নজরদারি ও হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেন।.
.
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায় টোল আদায়ের ১৪৩১ বঙ্গাব্দের মূল্য তালিকা অনুসারে ফুটপাতের প্রতি বর্গফুট জায়গার টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ব্যবসায়িক পর্যায়ে ৩ টাকা, আর প্রান্তিককৃষক বা গৃহস্থ পর্যায় শতকরা ৪ টাকা।কিন্তু হাজিরহাট বাজারের ফুটপাতের ফল ব্যবসায়ী আবুল বাশার জানান, টোলের তালিকা অনুসারে আমার ব্যবহারিত ১০ বর্গফুট জায়গার টোল ৩০ টাকা । কিন্তু ইজারাদারের চেলা চামুন্ডারা আমার নিকট থেকে আদায় করছে ৩০০ টাকা,রশিদের তো বালাই নাই। তিনি খোব করে বলেন, এখানেই শেষ নয় ইজারাদার বাজারের মালি (ময়লা পরিস্কারক) নিয়োগ ও তার বেতন বহন করার কথা থাকলেও বাস্তবে মালিবাজার পরিষ্কারের জন্য সকল পণ্য বিক্রেতার নিকট থেকে ৫০ টাকা হারে আদায় করছে। অর্থাৎ আমাদের আয়ের সিংহভাগই ওদের পকেটে যায়।.
.
এইভাবে অভিযোগ করছেন চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের গৃহস্থ মোহাম্মদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ১২০ টাকার কচুর লতি বিক্রয় করে টোল দিয়েছেন ৫০ টাকা বাস্তবে আমার টোল আসে পাঁচ টাকা। তোরাবগঞ্জ বাজারের সবজি ব্যবসায়ী কোবির হোসেন, করুণা নগর বাজারের সবজি দোকানি মরণ দাস একই অভিযোগ করেন। ফজুমিয়ার হাটের পান দোকানি মোঃ সিরাজ জানান তিনি টোল দেন ৫০ টাকা স্থলে ১৩০ টাকা । জানা যায়, পণ্য লোড-আনলোডের ট্রাক পিকআপ ভ্যানের টোল ২০ টাকা থেকে ৭০ টাকা হলেও বাস্তবে আদায় করা হচ্ছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। সর জমিনে ঘুরে উপজেলার সবকটি বাজারে একই চিত্র লক্ষ করা গেল।.
.
এ বিষয়ে কথা হয় হাজিরহাট বাজার ইজারাদার মোঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন সরদার ও তোরাবগঞ্জ বাজারের ইজারাদার শাহ আলমের সাথে। তারা বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে টোল আদায় করলে বাস্তবে বছরে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকাও উত্তোলন করা যাবেনা। উচ্চ মূল্যে ইজারা নেই বলেই, সরকারি তালিকা মানা সম্ভব হচ্ছে না। বিগত বছরের তালিকা সম্পর্কে আপনারা অবগত আছেন কারণ এ বছর সিডিউল বিক্রির সময় উপজেলা প্রশাসন তা সংযুক্ত করেছিল। অর্থাৎ ৫-১০লাখ টাকা উত্তোলন করা যাবে, আপনারা জেনেও কেন ৬১ লাখ (হাজিরহাট) ৬৫ লাখ (তোরাবগঞ্জ) টাকা মূল্য হাঁকালেন? সাধারণ মানুষের জান চেপে বাকী টাকা আদায় করবেন বলে?এমন প্রশ্নের জবাবে তারা নিরুত্তর ছিল।.
.
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে আমি অবগত আছি। সরকারি চার্ট অমান্য করে টোল আদায় কারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সকল ইজারাদারকে ইতিমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে। তালিকা না মানলে ইজারা বাতিলেরও সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। .
. .
ডে-নাইট-নিউজ / নাসির মাহমুদ (লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি)
আপনার মতামত লিখুন: